ঢাকার একটি ডাবিং থিয়েটারে একটি সিনেমার ডাবিং এর কাজ হচ্ছে।
সিনেমার ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ক অমিত হাসান। সিনেমার শুটিং শেষ। এখন ডাবিং এ অংশ নিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু এই একই সিনেমায় অন্য আরেকজন অভিনেতা শুটিং শেষে দেশের বাইরে থাকায় তার হয়ে কণ্ঠ বা ডাবিং করেছেন একজন পেশাদার ডাবিং শিল্পী।
একটি সিনেমার মূল শুটিয়ের পর ডাবিং এর অংশটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে একজন ডাবিং শিল্পী পর্দায় অভিনয় না করে শুধু দৃশ্য দেখে ডাবিং করেন?
বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি সিনেমায় ডাবিং করেছেন আনোয়ার শাহী। তিনি বলছিলেন পর্দার অভিনেতার সমস্ত আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয় তাকে।
মি. শাহী বলছিলেন “এটা আসলেই অনেক কঠিন একটা কাজ। অন্যের ইমোশন, অ্যাকশন নিজের মধ্যে এনে সেইভাবে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে পরিমিতি বোধটা অনেক প্রয়োজন”।
বাংলা সিনেমার সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রায় প্রতিটি সিনেমায় ডাবিং শিল্পীর দরকার পরে। কখনো মুল চরিত্রের জন্য কখনো আবার পার্শ্বচরিত্র গুলোর জন্য।
শুধু সিনেমায় নয়। বাংলাদেশের টেলিভিশন গুলোতে এখন বিদেশি সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে।
আর এটার বড় কারণ বাংলা ডাবিং। আগে এই বাংলা ডাবিং পাশের দেশ ভারতের কলকাতা থেকে করে আনা হলেও এখন অনেক সিরিয়ালের ডাবিং হচ্ছে দেশেই।
এবং সেখানে কণ্ঠ দিচ্ছেন অনেক অভিনয় শিল্পী। জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল সুলতান সুলেমানের- সুলেমান চরিত্রের কণ্ঠ দিয়েছেন অভিনয় শিল্পী দীপক সুমন। মি.সুমন বলছিলেন ডাবিং শিল্পীদের প্রথমত অভিনয় শিল্পী হতে হবে।
তিনি বলছিলেন “এখন যদি কেউ ডাবিং শিল্পী হিসেবে কাজ করতে চায় তাহলে থিয়েটারটা তাকে করতেই হবে। কারণ বাংলাদেশে যেহেতু ডাবিং শেখার সেই অর্থে কোন সুযোগ। তবে থিয়েটারে অভিনয়ের সাথে ডাবিং এর অভিনয়ের পার্থক্য আছে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে”।
বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কপোরেশনের একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার সোহেল আহমেদ, যাকে প্রতিটি সিনেমার ডাবিং এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকতে হয়।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় থেকে তিনি বলছিলেন সিনেমায় নতুন যারা কাজ করেন তারা অনেকেই প্রথমে ডাবিংটা পারেন না। আবার স্টার অভিনেতাদের ব্যস্ততা বা অন্যান্য কারণে ডাবিং শিল্পীরা কাজটা করে দেন।
“অনেক শিল্পী আছেন যারা প্রথম থেকেই ডাবিং করেন না। তার হয়ে অন্য আরেকজন করে দেন। দর্শকও কোনোদিন বুঝতে পারেনা যে কণ্ঠটা তার না। তবে মাঝখান থেকে যদি সে চায় তাহলে দর্শক একটা ধাক্কা খায়” বলছিলেন মি. আহমেদ।
তবে পর্দার পেছনে কাজ করা এই মানুষগুলোর একটা আক্ষেপের জায়গা রয়েছে। একটি চরিত্রের কণ্ঠ দিয়ে চরিত্র টিকে তারা জনপ্রিয় করছেন ঠিকই কিন্তু নিজেরা রয়ে যাচ্ছেন পর্দার আড়ালেই।
দীপক সুমন বলছিলেন একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে অন্তত তাদের নামটা দেয়া উচিত যাতে করে তাদের কাজের স্বীকৃতি মেলে।
“সুলতান সুলেমানে তিন বছর ধরে প্রায় ৪০ জনের মত কাজ করছে। অনেক জনপ্রিয় চরিত্রে কণ্ঠ দিচ্ছে। কিন্তু দর্শক কিন্তু জানে না তাদের নাম কি। এই শিল্পীদের নামটা প্রচার করা উচিত কারণ একজন শিল্পীর কাছে অর্থের স্বীকৃতির চেয়ে এই স্বীকৃতি অনেক বড়” বলছিলেন মি. সুমন।
ডাবিং সিরিয়ালের ক্ষেত্রে ডাবিং শিল্পীদের নাম উল্লেখ না করার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছেন এটা করা হলে বিদেশি সিরিয়াল নেয়ার চুক্তি ভঙ্গ করা হয়।
আর সিনেমার ক্ষেত্রে- পরিচালকের অনুমতি ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্মতির ভিত্তিতেই ডাবিং শিল্পীরা কাজ করে থাকেন-যেখানে নামের বিষয়টা উল্লেখ থাকবে না সেটা তারা আগে জেনেই কাজটা হাতে নেন।